
নববর্ষ মানেই নতুন সূর্যোদয়, নতুন আশার আলো। বাংলার আকাশ জুড়ে ঢাকের বাদ্যি, শিউলি ফুলের গন্ধ, আর চারদিকে প্রতিধ্বনিত হয় একটাই শুভেচ্ছা — “শুভ নববর্ষ!“। বৈশাখ মাসের প্রথম দিন, অর্থাৎ পয়লা বৈশাখ, কেবল নতুন বছরের সূচনাই নয়, এ এক সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক উৎসব, যা সারা ভারতের বাঙালি সমাজের হৃদয় ছুঁয়ে যায়।
এই বিশেষ দিনে, পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির হয়ে ওঠে এক অন্যতম পবিত্র কেন্দ্র, যেখানে হাজার হাজার ভক্ত নববর্ষ উপলক্ষে বিশেষ পূজা ও আচার পালন করতে ভিড় জমান।
🌸 নববর্ষ: এক নতুন সূচনা
বাংলা সাল ১৪৩২ শুরু হয়েছে ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে। মুঘল আমলে খাজনা সংগ্রহের সুবিধার্থে পয়লা বৈশাখ চালু হয়েছিল, বিশেষ করে সম্রাট আকবরের শাসনকালে। আজ সেই ঐতিহ্য রূপ নিয়েছে এক বর্ণময় উৎসবে, যেখানে ধর্ম, সংস্কৃতি ও আনন্দ একসাথে মিশে যায়।
মানুষ এদিন সকালে স্নান সেরে নতুন পোশাক পরে মন্দিরে যায়, মিষ্টি বিতরণ করে এবং একে অপরকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়।
🛕 দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দিরে নববর্ষের আচার
দক্ষিণেশ্বর কালী মন্দির, যা মা ভবতারিণীর মন্দির হিসেবেও পরিচিত, নববর্ষ উপলক্ষে এক বিশেষ পবিত্রতার ছোঁয়া পায়। কলকাতার হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত এই মন্দিরটি ১৮৫৫ সালে রানী রাসমণি নির্মাণ করেন। মন্দিরটির সাথে শ্রী রামকৃষ্ণ পরমহংস-এর নাম গভীরভাবে জড়িয়ে আছে।
নববর্ষের দিনে দক্ষিণেশ্বরে পালন করা হয় বিশেষ কিছু আচার:
মঙ্গলারতি: ভোরবেলায় শুরু হয় দেবীর আরতি, ঘণ্টা, শঙ্খ ধ্বনি ও মন্ত্রোচ্চারণের মাধ্যমে দেবীকে জাগানো হয়।
পুষ্পাঞ্জলি: ভক্তরা মারিগোল্ড ও পদ্মফুল দিয়ে প্রণাম জানিয়ে পুষ্পাঞ্জলি দেন।
বিশেষ ভোগ: খিচুড়ি, ফলমূল, সন্দেশ, নারু ইত্যাদি দিয়ে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়।
গঙ্গা স্নান: মন্দির সংলগ্ন গঙ্গায় পবিত্র স্নান করে অনেকেই নতুন বছরের শুরু করেন।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান: মন্দির চত্বরে ভক্তিগীতি ও লোকসংগীত পরিবেশন হয়, যা বাঙালি সংস্কৃতির প্রতিচ্ছবি।
🎉 ভারতের নানা প্রান্তে নববর্ষ উদ্যাপন
কলকাতার বাইরে, দিল্লি, মুম্বই, বেঙ্গালুরু, পুনে ইত্যাদি শহরে বসবাসরত বাঙালিরাও নববর্ষ ধুমধাম করে উদ্যাপন করেন। স্থানীয় বঙ্গ সমাজ সংগঠনগুলো প্রভাতফেরি, রবীন্দ্রসংগীত, কবিতা পাঠ, ও বৈশাখী মেলা আয়োজন করে।
ব্যবসায়ীরা এদিন হালখাতা খুলে পূজা করেন এবং ক্রেতাদের মিষ্টি বিতরণ করেন।
🍲 বৈশাখী ভোজ: খাওয়া-দাওয়ার উৎসব
নববর্ষ মানেই বাঙালির ঘরে ঘরে জমকালো ভোজ। রান্নাঘরে তৈরি হয় ইলিশ মাছ, শুক্তো, পোলাও, বেগুন ভাজা, আর মিষ্টির তালিকায় থাকে রসগোল্লা, মিষ্টি দই, পাটিসাপটা। পরিবার-পরিজনের সঙ্গে একত্রে বসে খাওয়া-দাওয়া ও আনন্দ উদ্যাপন চলে।
🌟 নববর্ষের বার্তা
নববর্ষ মানে শুধু দিন বদলানো নয়, বরং এক আত্মিক নতুন সূচনা। পুরনো কষ্ট, অভিমান, ভুলভ্রান্তি ফেলে রেখে এগিয়ে চলার অঙ্গীকার। দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে প্রতিটি ধূপ, প্রতিটি প্রদীপ আর প্রতিটি প্রণামের মধ্যে রয়েছে একটাই কামনা — শান্তি, সমৃদ্ধি আর ভালোবাসায় ভরা একটি নতুন বছর।
শুভ নববর্ষ ১৪৩২! নতুন বছর হোক আলোয় ভরা, মিষ্টি মুহূর্তে পূর্ণ।